চিনির বিকল্প কৃত্রিম মিষ্টি : ভালো না মন্দ
শুরুর কথা
মিষ্টিকথা, যাকে আমরা আদরকরে তৈল বলে ডাকি স্থান-কাল-পাত্রভেদে আপনার সাময়িক স্বার্থরক্ষাসহ শান্তি বা ভালোলাগা দিতে পারে। তবে, এটা নিশ্চিত জেনে রাখুন চিনি কোনকালেই আপনার স্বার্থ বা স্বাস্থ্য রক্ষা করে আপনাকে শান্তিতে থাকতে দিবেনা। সে যা করবে আপনার জিহবাকে একটু আরাম দিয়ে জীবনটাকে বিষিয়েে তুলবে নাহয় জীবনটাকে বিভীষিকাময় করে তুলতে ক্ষেত্র তৈরি করবে এবং শেষে আপনার জীবনের সব সুখ-শান্তি চিনিয়ে নিবে।
চিনির ক্ষতিকর দিক আলোচনা না করে উক্ত নিবন্ধটিতে চিনির বিকল্প কি, তার ব্যবহারের ভালো-মন্দ দিক অতিসাধারণ পড়ুয়া, সচেতন জনগন ও জ্ঞ্যান পিপাসুদের জন্য অতি-সাধারণভাবে বিভিন্ন স্ট্যাডি/ গবেষণালব্ধ তথ্য-সুত্রসহ উপস্থাপন করা হয়েছে।
কৃত্রিম মিষ্টি বা সুইটেনার্স কি?
চিনির বিকল্প কৃত্রিম মিষ্টি বা সুইটেনার্স হলো একধরনের ক্যামিকেল বা রাসায়নিক সাবস্টিটিউট যা খাবার ও পানীয়কে সুমিষ্ট করার জন্য ব্যবহার করা হয়। সাধারণ চিনির মত-তো অবশ্যয়ই কোন কোন সুইটেনার্স আপনার খাবারকে কয়েকশ থেকে কয়েক হাজারগুন পর্যন্ত মিষ্টি করতে সক্ষম তা আবার কোন প্রকার পাশ্ব-প্রতিক্রিয়া ছাড়াই। যদিও কিছু কিছু সুইটনারে ক্যালোরী বিদ্যমান তবে তার পরিমান এতোকম যে আলটিমেটলি ধরে নিতে হবে আপনি কোন প্রকার ক্যালোরি গ্রহণ করছেন না (1)।
সুইটেনার্স কিভাবে কাজ করে?
আমাদের জিহবার উপরিভাগ অনেক টেস্ট বাডস্ (স্বাদ কলিকা) নিয়ে গঠিত। এই টেস্ট বাডস্ গুলি অসংখ্য নিউরোইপথিলিয়াল ও সহায়ক কোষ দ্বারা গঠিত যাদেরকে বলা হয়ে থাকে টেস্ট রিসিপ্টর (স্বাদ গ্রাহক)। এই টেস্ট রিসিপ্টরগুলি বিভিন্ন প্রকারের স্বাদ-গন্ধকে সনাক্ত করতে সক্ষম (2)। আমরা যখন খাবার খেয়ে থাকি, খাবারের অনুগুলি (ফুড মলিকিউলার) টেস্ট রিসিপ্টর এর সংস্পর্শ-এ আসে। যখন টেস্ট রিসিপ্টর ও খাবারের অনুগুলির পারফেক্ট ম্যাচ (নিখুত মিল) হয় তখন টেস্ট রিসিপ্টর আমাদের মস্তিষ্কে সংকেত পাঠায় এবং তখন আমরা সেই নিদিষ্ট স্বাদ-গন্ধকে সনাক্ত করতে সক্ষম হই
(3)।
আমাদের জিহবার মিষ্টি স্বাদ রিসিপ্টর (sweetness taste receptor) সাধারণ চিনি ও কৃত্রিম সুইটেনার্স এর মলিকিউলার থেকে সমানভাবে মিষ্টি টেস্ট গ্রহণ করে মস্তিষ্কে সিগনাল পাঠাতে সক্ষম। যেহেতু কৃত্রিম সুই্টেনার্স গুলি ভেঙ্গে আপনার শরীরে ক্যালরিতে রুপান্তরিত হয়না; সে কারণে কোন প্রকার ক্যালরি (Zero calories) যোগ করা ছাড়াই আমরা মিষ্টি স্বাদ পেয়ে থাকি।
কয়েকটি কৃত্রিম সুইটেনার্স এর নাম
আমেরিকার ফুড এন্ড ড্রাগ এ্যাডমিনিস্ট্রেশন ও ইউরোপিও ইউনিয়ণ যেসমস্থ কৃত্রিম সুইটেনার্স এর অনুমোদন করেছেন (4)তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:
সুক্রালোজ (Sucralose) : সুক্রালোজ সাধারণ চিনির তুলনায় ৬০০ গুন বেশী মিষ্টি স্বাদ দিতে সক্ষম যা রান্না, বেকিং ও এসিটিক খাবারের সাথে মিশ্রনের জন্য খুবই উপযোগী। ইউরোপ ও আমেরিকায় স্প্লিনডা ব্র্যন্ড নামে ইহা বাজারজাত করা হয়। আশার কথা হচ্ছে এই Group এর কৃক্রিম সুইটেনার্স বাংলাদেশে উৎপাদিত ও বাজারজাত হচ্ছে। প্রাপ্ত সুত্রমতে বাংলাদেশে যে ব্র্যান্ড ও যে সমস্ত কোম্পানি এই সুইটেনার্স বাজারজাত করছে তার মধ্যে অন্যতম হলো: Zeorcal (powder and Tablet)-Square Pharmaceuticals Ltd; Cal X (Tablet powder)-Eskayef Bangladesh Ltd; Calonil (Tablet)-Ad-din pharmaceuticals Ltd; Kalfree (Tablet)-Eskayef Bangladesh Ltd. Sweet'n Zero (Tablet and powder)-Unimed Unihealth MFG. Ltd; Zero (Tablet and Oral Powder)-Acme Laboratories Limited (5)।
এ্যাসপারটেইম (Aspartame): এ্যাসপারটেইম সাধারণ চিনির তুলনায় ২০০গুন বেশী মিষ্টি হয় যা আমেরিকা ও ইউরোপিও ইউনিয়ণভুক্তদেশ গুলিতে Nutrasweet, Equal or Sugar Twin ব্র্যান্ড নামে বাজারজাত করা হয়। তথ্যসুত্রমতে, বাংলাদেশে পাওয়া এই গ্র্রুফের সুইটেনার্সগুলি হলো: Diasweet (Tablet)-The White Horse Pharma; Pep-Sweet (Tablet)-Sonear Laboratories Ltd; Raftilose (Tablet)-Healthcare Pharmacuticals Ltd; Sac-Sweet Pellet (Tablet)-Sonear Laboratories Ltd; Sucrol (Tablet)-Acme Laboratories Limited (6)।
এসেসালফেম পটাসিয়াম (Acesulfame potassium:) এসেসালফেম পটাসিয়ামও সাধারণ চিনি থেকে প্রায় ২০০গুন বেশি মিষ্টি হয় । ইহা রান্না ও বেকিং করা জন্য খুবই উপযোগী। আমেরিকা ও ইউরোপিও ইউনিয়ণভুক্তদেশ গুলিতে Sunnet or Sweet One ব্র্যান্ড নামে বাজারজাত করা হয়। বাংলাদেশে এই গ্র্রুফের সুইটেনার্স কোন কোম্পানি তৈরি বা বাজারজাত করার তথ্য জানা যায়নি।
এ্যাডভানটেইম(Advantame) : সাধারণ চিনির তুলনায় ইহা ২০,০০০ গুন বেশী মিষ্টি যা রান্না ও বেকিং করে খাওয়া যায়।
নিউটেইম(Neotame): নিউটেইম সাধারণ চিনির তুলনায় প্রায় ১৩,০০০ গুন বেশী মিষ্টি এবং আমেরিকা ও ইউরোপে Newtame ব্র্যান্ড নাম পরিচিত যা রান্না ও বেকিং করে খাওয়ার উপযোগী।
এ্যাসপারটেইম -এসেসালফেম সল্ট (Aspartame-acesulfame salt): সাধারণ চিনির তুলনায় ৩৫০গুন বেশী ক্ষমতা সম্পন্ন এই কৃত্রিম সুইটেনার্স আমেরিকা ও ইউরোপে twinsweet নামে পরিচিত।
স্যাক্রেইন(Saccharin): ৭৫০ গুন বেশী ক্ষমতা সম্পন্ন এই সুইটেনার্সটি আমেরিকা ও ইউরোপে Sweet'N Low, Sweet Twin or Necta Sweet পরিচতি হলেও বাংলাদেশে Sac Sweet (Tablet)-Sonear Laboratories Ltd; Saccharin (Tablet)-Reliance Pharmaceuticals Ltd নামে বাজারজাত করা হয়।
কৃত্রিম সুইটেনার্স: ক্ষুধা এবং ওজন হ্রাস-বৃ্দ্ধি:
বিশেষকরে যারা ওজন কমাতে চান তাদের কাছে কৃত্রিম সুইটেনার্স খুবই পছন্দের। যাইহোক; ক্ষুধা ও ওজনের হ্রাস-বৃদ্ধিতে এদের প্রভাব বিভিন্ন গবেষণায় বিভিন্ন তথ্য পরিলক্ষিত হয়।
(ক) ক্ষুধা:
কেউ কেউ মনে করে থাকেন কৃত্রিম সুইটেনার্সগুলি মানুষের ক্ষুধা বাড়িয়ে ওজন বাড়াতে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করতে পারে এবং মিষ্টিজাতীয় খাবারের প্রতি আখাংক্ষা বাড়িয়ে দিতে পারে। তাদের এই দাবী গুলি আপাতদৃষ্টিতে প্রসংশনীয় মনে হলেও সাম্প্রতিক কিছু গবেষণা এগুলোকে সমর্থন করেনা (7)। মুলকথা হচ্ছে, সাম্প্রতিক গবেষণায় এই প্রতিয়মান হয়েছে যে, কৃত্রিম সুইটেনার্সগুলি ক্ষুধা কমাতে ও ক্যালরি গ্রহনের পরিমান কমাতে সাহায্য করে (8)।
(খ)শারিরিক ওজন:
খাবার ও পানীয়তে সাধারণ চিনির বিপরীতে কৃত্রিম সুইটেনার্স ব্যবহারের ফলে শারিরিক ওজন কমানোর বিষয়টা বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক স্ট্যাডিতে পাওয়া যায়। এটা ঠিকযে আমরা যখন চিনির বিকল্প হিসেবে কৃত্রিম সুইটেনার্স ব্যবহার করছি তারমানে আমরা প্রতিদিনকার ক্যালরীর মাত্রাও কম গ্রহণ করছি যা আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করছে। ০৪ সপ্তাহ থেকে ৪০ মাস পর্যন্ত পরিচালিত বিভিন্ন গবেষণায় সর্বচ্চ ২.৯পাউন্ড (১.৩কেজি) ওজন কমার প্রমাণ পাওয়া গেছে (9)।
ডায়াবেটিস ও কৃত্রিম সুইটেনার্স:
ডায়াবেটিস রোগীরা ব্লাড সুগার নাবাড়িয়ে মিষ্টির স্বাদ গ্রহণ করতে চাইলে এই কৃত্রিম সুইটেনার্স এর বিকল্প নেই। অনেক নিয়ন্ত্রিত গবেষণায় (Controlled study) ব্লাড সুগার ও ইনসুলিন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কৃত্রিম সুইটেনার্স এর কোন প্রভাব পাওয়া যায় নাই (10)। তবে এটা ঠিক যে, খাবারে চিনি ও ক্যালোরি গ্রহনের পরিমান কমিয়ে কৃত্রিম সুইটেনার্স ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে খুব ভালভাবে সহায়তা করে।
মেটাবলিক সিন্ড্রম (বিপাকীয় সিন্ড্রম) ও কৃত্রিম সুইটেনার্স:
মেটাবলিক সিন্ড্রম এমন একটি মেডিকেল কন্ডিশন যার মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ মাত্রায় ব্লাড সুগার, পেটের অস্বাভাবিক মেদ, উচ্চ মাত্রায় কোলেস্টেরোল বিদ্যমান। আর এই কন্ডিশনগুলি কার্ডিওভাসকুলার ডিজিস যেমন হার্ট স্ট্রোক (কার্ডিয়াক এ্যারেস্ট), হৃদ রোগ ও টাইপ-০২ ডায়াবেটিস এর অন্যতম কারণ।
মাত্রাতিরিক্ত ওজনধারী ও স্থুলকায় মানুষের উপর পরিচালিত সাম্প্রাতিক সময়ে গবেষণা করতে গিয়ে তাদেরকে প্রতি দিন ১ লিটার রেগুলার সোডা /ডায়েট সোডা/নরমাল পানি অথবা সেমি-স্কীম দুধ খেতে দেয়া হয়। ০৬ মাস পর দেখা যায়, যাদেরকে পানি অথবা ডায়েট সোডা দেয়া হয়েছে অন্যদের তুলনায় তাদের ১৭-২১ % ওজন, ২৪-৩১ % পেটের মেদ,৩২% রক্তের কোলেস্টেরল ও ১০-১৫% ব্লাড প্রেসার কমেছে(11)।
অন্ত্রের স্বাস্থ্য (Gut Health) ও কৃত্রিম সুইটেনার্স :
সুস্থ্য-সবল থাকার জন্য অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা রাখে। অন্ত্রের অবস্থা দূর্বল হলে ওজন বৃদ্ধি, ব্লাড সুগারের নিয়ন্ত্রণহীনতা, রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থায় দূর্বলতা, মেটাবলিক সিন্ড্রম ও অনিদ্রার মতো রোগ হতে পারে (12)। গাট ব্যাকটেরিয়ার গঠন ও কার্যপ্রনালী মানুষভেদে ভিন্ন-ভিন্ন হয় এবং কৃত্রিম সুইটনার্সসহ আমরা যা খাই তার প্রভাব এতে বিদ্যমান। কোন কোন ব্যাক্তির ক্ষেত্রে কৃত্রিম সুইটেনার্স গাট ব্যাকটেরিয়ার কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে যা উপরোল্লিখিত রোগ হওয়ার ঝুঁকির কারণ হতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে একটি স্ট্যাডিতে শুধুমাত্র স্যাক্রেইন গ্রহণ করেছেন এমন ০৭ এর মধ্যে ০৪ জন এব্যাপারে নেগেটিভ রেসপন্স দিয়েছেন (13)। তবে এই প্রভাব সম্পর্কে-এ নিশ্চিত হতে হলে কন্ট্রোলবেইজড আরো গবেষণার দরকার। তবে গবেষণায় স্যাক্রেইন ব্যাতিরেকে অন্যান্য সুইটেনার্স বিষয়ে তেমন নেগেটিভ কিছু পাওয়া যায় নাই।
ক্যান্সার ও কৃত্রিম সুইটেনার্স
ক্যান্সার ও কৃত্রিম সুইটেনার্স এর মধ্যকার লিঙ্ক নিয়ে সেই সত্তরের দশকে বিতর্ক শুরু হয় এবং বিতর্কটি আরো শক্তিশালী হয় যখন ইঁদুরের উপর পরিচালিত স্ট্যাডিতে (স্যাক্রেইন ও সাইক্লামেট দ্বারা) ব্লাডার ক্যান্সার এর ঝুঁকি পাওয়া যায়। তবে স্যাক্রেইন এর বিপাকপ্রক্রিয়া ইঁদুর ও মানুষের জন্য সম্পূর্ন আলাদা।
এর পর প্রায় ৩০টি স্ট্যাডিতে এই প্রমাণ হয় যে, মানবদেহে ক্যান্সার ডেভেলপ করার ক্ষেত্রে কৃত্রিম সুইটেনার্স এর কোন কার্যকারণ সম্পর্ক নাই (14)। এর মধ্যে অন্যতম একটি গবেষণায় প্রায় ৯,০০০ লোকের উপর প্রায় ১৩ বছর ধরে গবেষণা করে ক্যান্সার ডেডেলপ করার ক্ষেত্রে কৃত্রিম সুইটেনার্স এর ভূমিকা না থাকাটা নিশ্চিত হয়েছেন (15)। প্রায় ১১ বছর ধরে প্রকাশিত একটি পর্যালোচনামূক (রিভিও স্ট্যাডিতে) গবেষণা করে ক্যান্সার রিস্ক বাড়ার ক্ষেত্রে কৃত্রিম সুইটেনার্স এর কোন প্রভাব খুঁজে পাওয়া যায় নাই। এই স্ট্যাডিটি আমেরিকা ও ইউরোপিও ইউনিয়ণ কতৃপক্ষ যাচাই করে নিশ্চিত করেছেন যে কৃত্রিম সুইটেনার্স ও তার অনুমোদিত মাত্রা ক্যান্সার এর ঝুঁকি বাড়ায়না (16)।
দাঁতের স্বাস্থ্য ও কৃত্রিম সুইটেনার্স:
দাঁতের রোগগুলি সাধারনত দাঁতের ক্ষয় ও দাঁতের ছিদ্র হওয়া নামে পরিচিত; ইহা তখনই হয় যখন আমাদের মুখের ব্যাকটেরিয়াগুলি চিনিকে সক্রিয় (ferment) করে তোলে। শেষে তা অ্যাসিড তৈরী করে দাঁতের এনামেলকে ক্ষতি্গ্রস্ত করে। আশার কথা হচ্ছে সাধারণ চিনির মতো কৃত্রিম সুইটেনার্স গুলি মুখের ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শ-এ এসে কোন প্রকার অ্যাসিড তৈরি করেনা। যার ফলশ্রুতিতে তারা দাঁতের কোন ক্ষয় করেনা[(17)। সে কারণে আমেরিকান ফুড এ্যান্ড ড্রাগ এ্যাডমিনিস্ট্রিশন (এফডিএ) ও ইউরোপিয়ান ফুড স্যাফটি অ্যাথোরিটি (ইএফএসএ) দাবি করেছের যে সুক্রালজ সহ অন্যান্য কৃত্রিম সুইটেনার্স দাঁতের অ্যাসিডকে নিষ্ক্রিয় করে ক্ষয়রোগ প্রতিরোধ করে (18)।
মাথা ব্যাথা, অবসাদ গ্রস্ততা, খিচুনি বনাম কৃ্ত্রিম সুইটেনার্স:
কিছু কৃত্রিম সুইটেনার্স বিশেষকরে এ্যাসপারটেইম গ্রহনের কারণে কিছু ব্যাক্তির মাথা ব্যাথা, অবসাদ গ্রস্ততা ও খিচুনীর মতো জটিলতার তথ্য পাওয়া গেলেওে বেশীরভাগ স্ট্যাডিতে এ্যাসপারটেইম এর সাথে মাথাব্যাথার কোন যোগসুত্র খোঁজে পাওয়া যায়নি। তবে যারা মুড ডিজওডার রোগে ভোগেন তাদের এ্যাসপারটেইম গ্রহণ না করাই শ্রেয়; কারণ তাদের কেউ কেউ এ্যাসপারটেইম গ্রহণের পর অবসাদগ্রস্ততার কথা বলেছেন। খিচুনীর সাথে এ্যাসপারটেইম গ্রহণের তেমন কোন জোড়ালো যোগসুত্র পাওয়া না গেলেও একটি গবেষণাতে শিশুদের (খিচুনীবিহী)মস্তিষ্ক কাজ (Brain activities) বেড়ে যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
পাশ্ব-প্রতিক্রিয়া ও কৃত্রিম সুইটেনার্স :
যে সমস্থ লোকের মেটাবলিক ডিজওডার ফিনাইলকিটোনিউরিয়াল (PUK) আছে তারা এ্যাসপারটেইম এবং যাদের সালফোনামাইডিস এর প্রতি প্রতিক্রিয়াশীল (রি-এক্টিভ) তাদের স্যাক্রেইন পরিহার করা উচিত। তবে সাধারনভাবে কৃত্রিম সুইটেনার্সগুলি নিরাপদ ও পাশ্ব-প্রতিক্রিয়ামুক্ত বলে বিবেচনা করা হয় (19)। আমেরিকান ফুড এ্যান্ড ড্রাগ এ্যাডমিনিস্ট্রিশন (এফডিএ) ও ইউরোপিয়াণ ফুড স্যাফটি অ্যাথোরিটি (ইএফএসএ) কতৃপক্ষ খুব সতর্কভাবে যাচাই-বাচাই করে নিশ্চিত হয়েছে যে, কৃত্রিম সুইটেনার্স খাওয়া ও পান করা নিরাপদ।
শেষের কথা:
আপনি যদি আপনার খাবারের সাথে অতিরিক্ত ক্যালোরী যোগ নাকরে মিষ্টি স্বাদ পেতে চান, শরীরের ওজন কমাতে চান, ব্লাড সুগার কম রাখতে চান বা দাঁত ভালো রাখতে চান তাহলে আপনার কাছে কৃত্রিম সুইটেনার্স এর বিকল্প কিছু নাই। কোন কোন গবেষণায় এ্যাসপারটেইম, সাইক্লামেট ও স্যাক্রেইন গ্রহণে ব্যাক্তি বিশেষের ক্ষেত্রে কিছু নেগেটিভ প্রভাব হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। তবে সবদিক বিবেচনায় আনলে অন্যান্য কৃত্রিম সুইটেনার্সুগুলি নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত। ওজন নিয়ন্ত্রণ, ওজন কমানো, ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ, রক্তের কোলেস্ট্রোরল নিয়ন্ত্রণ, দাঁতের ক্ষয়রোধ করা ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে অনুমোদিত সুইটেনার্সগুলি গ্রহণ যেতে পারে। আর যদি কৃত্রিম সুইটেনার্স নিয়ে আপনার কোন শঙ্কা বা ভয় থাকে আপনার জন্য আর একটি পথ খোলা রয়েছে প্রাকৃতিক সুইটেনার্স । প্রাকৃতিক সুইটেনার্স নিয়ে লেখাটি প্রক্রিয়াধীন আছে, জার্নাল রিভিও-পর্যালোচনা শেষ হলে পরবর্তী প্রবন্ধে পাঠকের কাছে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে ইনশাআল্লাহ।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার
প্রথমেই আমি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি পরম করুণাময় দয়ালু আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন আর এই ক্ষুদ্রতম কাজটি করার ইচ্ছা, ধৈয্য ও তওফিক দান করেছেন। তারপর আমি আমার সহ-পাটি, বন্ধু-বান্ধব এবং সহকর্মীদের প্রতিও শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, যারা আমাকে পরামর্শ ও উৎসাহ দিয়ে এ ধরনের কাজ করার জন্য অনুপ্রানিত করেছেন।
আমি এও স্বীকার করছি যে, আমি সাবজেক্ট ম্যাটার স্পেশালিস্ট নয়। সমাজ কল্যাণ ও ডেভেলপমেন্ট প্ল্যানিং বিষয়ে এ্যাকাডেমিক ডিগ্রির পাশা-পাশি দীর্ঘ ১৫ বছর বিভিন্ন দেশী-বিদেশী ও ইউএন (জাতি সংঘ) উন্নয়ণ সংস্থায় কাজের অভিজ্ঞতা, প্রশিক্ষণলদ্ধ জ্ঞাণকে পুঁজি করে তার সাথে দেশী-বিদেশি লেখকের লেখা ও গভেষণাপত্র রিভিউ করে উক্ত প্রবন্ধটি লেখা চেষ্টা করেছি। লেখাটি সম্পন্ন করতে গিয়ে যেসমস্থ দেশী-বিদেশি লেখকের লেখা ও গভেষণাপত্রের সাহায্য নেয়া হয়েছে তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমার এ লেখাটি পড়ে কোন পাঠক, গবেষক ও ছাত্র-ছাত্রীগন যদি একটুও সচেতন ও উপকৃত হয় তাহলে আমার চেষ্টা সফল হয়েছে বলে আমি ধরে নিব। বাংলাদেশে এধরনের গবেষণা ও লিখা-লিখির সংখ্যা খুব বেশী নয়। তাই এ বিষয়ে আরো প্রচুর গবেষণা ও লিখা-লেখির সুযোগ আছে।
নিজের অজস্র সীমাবদ্ধতা, বানাণগত অজ্ঞতা সহ বিভিন্ন জার্নালের ভাষান্তর ও পর্যালোচনা সন্নেবিশিত করতে গিয়ে নির্ভূল থাকার বহুচেষ্টা সত্বেও কিছু ভূল থেকে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। আশা করছি পাঠকগণ আমাকে ফিডব্যাক দিয়ে কৃতার্থ করবেন যা আমি পরবর্তীতে সংশোধণ করে নিব।
মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন ও সবাইকে সুস্থ্য রাখুন!
আমিন!
মো. মিজানুর রহমান মিজান
বিএসএস(অনার্স);এমএসএস-সমাজ কল্যাণ;পিজিডি(ডেভেলপমেন্ট প্ল্যানিং)
উন্নয়ণ কর্মী
তথ্য সুত্র
[1] Low‐calorie Sweeteners and Other Sugar Substitutes: A Review of the Safety Issues: https://bit.ly/2lHSRsx
[2]How does our sense of taste work? https://bit.ly/2FqHyxE
[3]How does our sense of taste work? https://bit.ly/2FqHyxE
[4] Sweeteners Permitted for Use in Food in the United States and European Union : https://bit.ly/2m1okpT ; https://bit.ly/2lIjXzK
[5] Sucralose contains artificial sweetener brand name in Bangladesh: https://bit.ly/2k7ZeoQ
[6] Aspartame contains artificial sweetener brand name in Bangladesh: https://bit.ly/2lXF01t
[7] The effect artificial sweetener on appetite and weight gain: https://bit.ly/2lCxCZq; https://bit.ly/2lBPsMb; https://bit.ly/2lHNGcs; https://bit.ly/2xd6jI5
[8] The effect artificial sweetener reduce hunger and calorie intake: https://bit.ly/2k4QhMT; https://bit.ly/2k5xLE9; https://bit.ly/2lImnyo; https://bit.ly/2kAyn4P; https://bit.ly/2kyD8vS
[9]Reducing weight consumption of artificial sweetener: https://bit.ly/2ky1lT1; https://bit.ly/2kABEkD; https://bit.ly/2lEGyxg
[10]Impact of artificial sweetener on increasing blood sugar and insulin: https://bit.ly/2ky5giH; https://bit.ly/2lDr7FE; https://bit.ly/2m1frN2; https://bit.ly/2m6UujZ; https://bit.ly/2m4Rx3l; https://bit.ly/2lCpbgK; https://bit.ly/2MNXrlx; https://bit.ly/2ky1lT1
[11] https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/22205311
[12] Diseases linked to the poor gut health: https://bit.ly/2k5WFUh ; https://bit.ly/2YZ8yLj ; https://bit.ly/2Kj6x9y ; https://bit.ly/2lAWMrf
[14] Link not found in growing cancer for consumption of artificial sweetener: https://bit.ly/2lHSRsx; https://bit.ly/2lDxpFg; https://bit.ly/2lF5JzX; https://bit.ly/2ky0CBj
[17] Dental considerations in sucralose use: https://bit.ly/2kmBm0V
[18] Artificial sweeteners neutralized acid and prevent dental decay: https://bit.ly/2m2dDDu; https://bit.ly/2kbC2WQ
[19] Consumption of artificial sweetener is generally safe: https://bit.ly/2lHSRsx